বন্ধুরা, আমরা সবাই জানি যে বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। এর মধ্যে শরৎ একটি। ঠিক বর্ষার পরপরই আসে শরৎকাল। ইংরেজিতে এর নাম অটাম, ল্যাতিন ভাষায় যার অর্থ শুষ্ক ও শীতল। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় এর অর্থ দাঁড়ায় ঠিক তার উল্টো; ভ্যাপসা গরম, প্রখর সূর্যতাপ আর যখন তখন বৃষ্টি।
তবে অন্য সবগুলো ঋতুর মতো ইশরতের ও আলাদা কিছু বৈশিষ্ট আছে। এর আরেক নাম শুভ্র ঋতু বা সাদা ঋতু। কারণ, এর প্রধান সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, নদীর চরে দুধ সাদা কাশফূল, আর চাঁদের বুড়ির চরকা কাটা সুতোর মধ্যে। এই সব গুলোর রংই সাদা। কিন্তু ওই বিশেষ সাদা ফুলটার জন্য এর নাম সাদা ঋতু। হ্যা, আমি কাশফুলের কথাই বলছি। শরতের নীল আকাশে সারিসারি সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় সব সময়। সেই সাদা মেঘই যেন তুলার মত পৃথিবীতে নেমে আসে কাশফুল হয়ে।
বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায়ই কাশফুল জন্মে। সাধরণত নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোন উঁচু জায়গায় কাশফুল বেশি জন্মায়। তবে নদীর তীর এবং নদীর চরে এদের বেশি জন্মাতে দেখা যায়। এর কারণ হলো সেখানে পলিমাটির আস্তর থাকে। এর ফলে কাশফুলের মূলখুব দ্রুত ছড়ায় এবং গাছ গুলো তাড়াতাড়ি বড় হয়।
কাশফুলের বৈজ্ঞানিক নাম স্যাকারাম স্পন্টেনিয়াম। এটা এক ধরনের ঘাস জাতীয় জলজ উদ্ভিদ। কিন্তু জলজ উদ্ভিদ হলেও এটা সরাসরি পানিতে জন্মে না। জন্মে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে উপরের দিকে সঞ্চিত শুকনো মাটি কিংবা বালুর স্তুপে। অনেক জায়গায় এটা লম্বা ঘাস নামে ও পরিচিত। ভারত বর্ষের অনেক এলাকায় এর নাম কান’সগ্রাস অর্থাৎ খানের ঘাস। তার মানে হলো কাশফুল আসলে এক জাতীয় ঘাস ফুল। অঞ্চল ভেদে এটা ৫ থেকে ১৫ ফুটপর্যন্ত লম্বা হয়।
নীল আকাশের নিচে নদীর বুক জুড়ে সাদাকাশ ফুল যখন মৃদু হাওয়ায় দোলখায়, তখন মনে হয় শরতের রুপকে আমাদের সামনে মেলে ধরতেই এই ফুলটি সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ। সত্যিই, এ আবেশের কোনসীমা-পরিসীমা নেই। ঋতু বৈচিত্রের যে বর্ণীল আবহ সমাচ্ছন্ন হয়ে আছে আমাদের প্রকৃতিতে, তা ই সময় সময় প্রকাশ পায় এইসব পুষ্পসুষুমার মধ্য দিয়ে। কাশফুল নদী-বাংলার সৌন্দর্য প্রকাশে তেমনি একটি সুষুমা।
বন্ধুরা, সময় করে চলোনা একটু ঘুরে আসি প্রকৃতির রাজ্য থেকে। উপভোগ করে আসি শরতের শুভ্র সৌন্দর্য।মনে রাখবে, কাশফুল কিন্তু বেশিদিন টেকেনা। এক একটাফুলের মোচা সর্বোচ্চ তিনদিন। কোন কাশবনে ফুল ফোটা শুরু হলে দু সপ্তাহের ভিতরেইতা শেষ হয়ে যায়। তাই, আর সময় নষ্ট নয়। আজকেই চল। ঢাকার ভেতরে কিংবা আশে পাশের কোন এলাকায়। আর গ্রামে গেলেতো কথাই নেই।তবে সাবধান থাকা ভালো; কাশবনে কিন্তু বিষধর সাপও থাকে। ঘুরতে যাওয়ার সময় এই দিকটাও লক্ষ্য রাখতেহবে।