পারিবারিক বন্ধন মজবুত করা, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং সুন্দর ও রোমাঞ্চকর পারিবারিক স্মৃতি সৃষ্টির জন্য পারিবারিক ভ্রমণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তবে এটা শুধু পিতামাতার সঙ্গে সন্তানদের সুন্দর স্মৃতির মুহুর্ত্যই নয়; এর আরো অনেক ব্যবহারিক দিক আছে। যেমন- দৈনন্দিন জীবনের এক ঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাওয়া, নতুন জায়গার নতুন পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, নতুন খাবারের স্বাদ গ্রহণ করা, নতুন লোকজন সম্পর্কে জানা এবং এমনকি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালোরাখা।
ব্যক্তি পরিবারের বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবারের ধারনা ও সমাজে প্রচলিত আছে। এখানে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সদস্যরা এক পরিবারভুক্ত হয়ে কাজ করেন। তাদের লক্ষ্যও থাকে এক অভিন্ন। তাই তাদের একে অপরের সঙ্গে জানাশোনা ও বোঝাপড়া এক দিকে যেমন পরস্পরের সঙ্গে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টিতে সহায়তা করে, অপরদিকে তেমনি প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিবেশকে করে সৌহার্দপূর্ণ। ফলে স্বল্প আয়াসে অধিক ফললাভ সম্ভব হয়। এই সম্পর্কন্নোয়ন ও কাজের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির সর্বোত্তম উপায় হলো প্রাতিষ্ঠানিক ভ্রমণের আয়োজন করা।
গেলো ১৬ই জুলাই থেকে ১৮ই জুলাই পর্যন্ত কিডস ক্রিয়েশানটিভি পরিবার তেমনি একটি ভ্রমণের আয়োজন করে। গন্তব্য পর্যটন শহর কক্সবাজার। ১৬ তারিখ সকালে ঢাকা টু কক্সবাজারগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে শুরু হয় অগ্রবর্তীটিমের যাত্রা। রাতের ট্রেনে যায় আরেকটিম। ১৭ তারিখ সকালে সবাই সমবেত হয় কক্সবাজার শহরের হোটেল বে-মেরিনায়। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে অনেকেই বেরিয়ে পড়ে সাগরের সানিধ্য নিতে। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি ভুলে অবগাহনকরে নোনাপানিতে। তারপর হোটেল ফিরে আসা, লাঞ্চ করা ইত্যাদি। দিনটা কেটে যায় প্রতিটি পরিবারের নিজেদের মতো করে।
বিকালের শিডিউলে রাখা হয় র্যাডিয়েন্ট ফিম ওর্য়াল্ড নামক একুরিয়াম পরিদর্শন। শিশুরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে ঘুরেঘুরে দেখে সেই একুরিয়াম। সাগরতলের জগত কেমন হয় সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা লাভ করে তারা। একুরিয়াম থেকে ফিরে আবার নিজের মতো সময় পার করা; কেউ হোটেললবিতে, কেউ রেস্টুরেন্টে, কেউ বা আবার সেই সাগর পারে সূর্যাস্ত দেখতে।
রাত সাড়ে ৮টায় আয়োজন করা হয় সম্মিলিত অনুষ্ঠানের। ছোট্ট শিশু সিয়ামের তেলাওয়াত ও জাহরার গানের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সেখানে প্রধান আলোচক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আ জ ম ওবায়দুল্লাহ। প্রধানঅতিথি ছিলেনকিডস ক্রিয়েশানটিভি‘র সম্মানিত চেয়ারম্যান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মানিত ভাইস চেয়ারম্যান। কিডস ক্রিয়েশানটিভি‘র সিইও শরীফবায়জীদ মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোর দায়ীত্বশীলরাও বক্তব্য রাখেন। সবশেষে ডিনারের মাধ্যমে শেষ হয় সেদিনের কর্মসূচি।
দ্বিতীয় দিনটা ছিলো আরো চমৎকার। সকাল সকাল নাস্তা সেরে সবাই চড়ে বসে চান্দের গাড়িতে। না, চাঁদে যেতেনয়। গন্তব্য ছিলো কোরাল বিচ পাটুয়ারটেক। কক্সবাজার শহর থেকে ৩০ কি.মি দূরে পাটুয়ারটেক সৈকত। বেলাবাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন সূর্যের প্রখরতাও বাড়তে থাকে। এরমধ্যে দিয়েই চলে আমাদের ভ্রমণ। একদিকে সমূদ্র, আরেক দিকে পাহাড়। মাঝখানের কালো পিচঢালা সড়কের বুকচিড়ে এগিয়ে যাচ্ছে চান্দেরগাড়ি। ঘন্টা দেড় একেরমধ্যে আমরা পৌঁছে যাই গন্তব্যে। সবাই যেন চনমনে হয়ে ওঠে। গাড়ি থেকে নেমেই যেন ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় সমূদ্রে। কিন্তু ধারালো কোরাল সেখানে বাধসাধে। এরপরও সবাই ইচ্ছামতো মনের আনন্দে বেশ অনেকটা সময় পার করে সেখানে। পাশাপাশি চলে গানের শুটিং। কেউ বাশরবতে, আবার কেউ বাডাবের পানিতে গলাভিজিয়ে নিচ্ছে।
পাটুয়ারটেক থেকে ফিরে আসার সময় হিমছড়িতে যাত্রাবিরতি। একদিকে হিমছড়ির ঝর্নাতে চলে গানের শুটিং, অন্যদিকে পর্বতারোহীরা ছুটে উর্ধ্বপানে। পাহাড়েরশীর্ষ থেকে সমূদ্র দেখাসত্যিই রোমাঞ্চকর। ঘন্টাখানেক সময় এখানে পার করে আবার চান্দের গাড়িতে আরোহণ এবং দুপুর ২টা নাগাদ হোটেলে ফিরে আসা।
তারপর আবার ব্যক্তিগত সময়। দুপুরের খাবারের পর সামান্য বিশ্রাম। আবার কেউ কেউ বিশ্রাম রেখে ছুটের শপিং করতে। এভাবে আনন্দের সাথে ২য় দিনটি পার করে সন্ধার পর ফেরার ট্রেন ধরতে সবাই কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশানের দিকে ছুটে।
প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কাজের বাইরে পারিবারিকভাবে এরপ্রতি আমাদের ভালোবাসা ও কমিটমেন্ট প্রকাশের সুযোগ হয়ে এর আগে হয়ে ওঠেনি। তাই কিডস ক্রিয়েশনটিভি‘র আয়োজনে এই ভ্রমণ এর প্রতি এর পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা প্রকাশের একটা অনন্য সুযোগ এনে দেয়। সেই সাথে নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত করে সকলকে। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি, পথের অসুবিধা, সব কিছু ছাপিয়ে ভ্রমনটি হয়ে ওঠে সত্যিকারের এক প্রাণের মেলা।